Friday 25 September 2015

'দূর্গোৎসব / নবরাত্রির তাৎপর্য '

নবরাত্রির মানে হল 

'নূতন রাত্রি '  বা ' নয়টি রাত ' ।
'রাত্রি' - রা' ও 'ত্রি'
রা মানে বিশ্রাম পাওয়া , কিসের থেকে ? 'ত্রি' অর্থাত্ তিন প্রকার সমস্যার থেকে বিশ্রাম ।
আমাদের সমস্যা তিন প্রকারের । শারীরিক,  মানসিক এবং ঘটনাজনিত অর্থাৎ বাহ্যিক । এই তিন ধরনের সমস্যার হাত থেকে পরিত্রাণ হয় কেবল গভীর নিদ্রাকালে । মানুষ এমনকি জীবজন্তুরও ঘুমের সময় কোন চিন্তা থাকেনা । সে সুখি বা দুঃখি যেমন মানুষই হোন না কেন , নিদ্রায় সকলেই সমান ।
নূতন রাত্রি - আমাদের মায়ের গর্ভে নমাস থাকার পর যেমন আমরা পূর্ণ এক নতুন জীবন পাই, ঠিক তেমন এই নব-রাত্রিও আমাদের পূনর্জীবিত করে, জীবনীশক্তি ও উর্জায় ভরিয়ে দেয় । আমাদের সব নাকারাত্মক ভাবনা মিটিয়ে জগদ্জননী তাঁর দৈবী সাকারাত্মকতা দিয়ে আমাদের চেতনশক্তি ভরিয়ে দেন । 

দেবী অসুরদলনী । মধু এবং কৈটভ  এই দুই অসুরের নাম আমরা সবাই শুনেছি । আকর্ষণ ও বিকর্ষণ - ই মধু এবং কৈটভ । মা আকর্ষণ ও বিকর্ষণ থেকে মুক্তি দিয়ে আমাদের সকেন্দ্রিত করেন ।

অনেকসময় আমাদের ব্যবহার আচরন চেয়েও আমাদের বশে থাকেনা । এগুলি যেন রক্তে বসে থাকা দানব । এই অসুর টির নাম রক্তবীজাসুর ।
দেবীর আরাধনা, এই বিশেষ নবরাত্রি সাধনা এবং ধ্যান আমাদের সেই শক্তি প্রদান করে যা দিয়ে আমরা নিজেদের ভিতরে বসে থাকা অসুরী শক্তিকে জয় করতে পারি ।

আরো কয়েকটি অসুরের নাম এখানে বলা উচিৎ , মহিষাসুর, শূম্ভ এবং নিশূম্ভ । এই অসুরি গুণগুলি যথাক্রমে আমাদের আলস্য , নিজের ও পরপ্রতি সন্দেহ । চন্ড, মূন্ড এবং ধূম্রলোচন হলো বিরোধিতা এবং অজ্ঞতা এবং অস্বচ্ছ দৃষ্টি । দেবীর বরে আদিশক্তি মহামায়ার শক্তি ছাড়া এই দুর্গুণগুলি জয় করা সহজ নয় । তাই মহামায়ার বন্দনা ।।

নদিনের প্রথম তিন দিন তমোগুণ নিবারিনী , দ্বিতীয় তিনটি দিন রজোগুণ নিবারিনী এবং তৃতীয় তিনটি দিনে স্বতঃগুণের বৃদ্ধিতে এই দুই গুণের বিজয় প্রাপ্তি । যখন স্বতঃগুণের বৃদ্ধি হয়, কেবল তখনই জীবন উৎসব হয়ে ওঠে । তাই এ তিনটি দিন কেবল আনন্দ , কেবলি উৎসব ।

বিজয়া দশমী চৈতন্যে এই সর্বোচ্চ গুণের সমাহারের জয়, সৎ এর স্বতঃ পরিস্ফুটন । 

বেদান্তিক নজরে দেখতে গেলে এ উৎসব কেবল ভালোর মন্দের ওপর বিজয় লাভ নয়, এ জয় সত্য এবং অদ্বৈতের বিজয়,  আপাতদৃষ্টিতে যে দ্বৈত নাম ও রূপে দেখি তদোপরি এ জয় ।।

শুদ্ধচৈতন্যরূপিনী দেবী নিজেই যে বিজয়ায় ঘটের সুতোটি কেটে শিবে লীন হয়ে যান আমাদের এই প্রার্থনা পূর্ণ করে "রূপং দেহি জযং দেহি যশো দেহি দ্বিশোযহী " ।

মৃন্ময়ী থেকে চিন্ময়ী , নাম রূপ থেকে চৈতন্য , এই-ই তো দূর্গোৎসব ।

"সর্বব্যাপিনী মহাযোগিনী শঙ্করপ্রিয়া দূর্গে .... "

।। জয় জয় মা ।।

No comments:

Post a Comment